ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

 

ডেঙ্গু একটি জনপ্রিয় বায়ারাস দ্বারা সংক্রমিত একটি ঝুলস্বরুপ রোগ। এই লেখাটি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবে। ডেঙ্গু কি?
ছবি: আনস্প্ল্যাশ ডটকম


ডেঙ্গু একটি জনপ্রিয় ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত একটি ঝুলস্বরুপ রোগ। এই লেখাটি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

ডেঙ্গু কি?

ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ, যা এডিস মশা দ্বারা সংক্রমিত ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগের উপসর্গগুলি সাধারণভাবে তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে দেখা দেয় এবং তা অধিকতরই জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ির রূপে প্রকাশ পায়। সাধারণভাবে, প্রথম সাত দিনে ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য পেতে পারে।

কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক রক্তক্ষরীর রূপ নেয়, যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার নামে পরিচিত। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকারের মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা নিঃসরণ ঘটে। আরও কিছু অধিক ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়, যেটির ফলে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।

ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক কিছু ধরনের এডিস মশা (স্ত্রী মশা) যা আমাদের দেশে এডিস ইজিপ্টি মশা প্রধানতম। এই ভাইরাসের পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়, এবং একটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী সাধারণভাবে আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে কিন্তু অন্য সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।


যদি পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ করে, তাহলে রোগী মারাত্মক জটিলতা দেখতে পারে। কিছু প্রকারের টেস্টের মাধ্যমে, যেমন, ভাইরাসের আরএনএ এবং এর প্রতিরোধী এন্টিবডির উপস্থিতি দেখেও ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা যেতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর সম্বন্ধে এই দশকের শুরুতে আমাদের দেশে বিশেষভাবে রাজধানী ঢাকাতে ব্যাপক রূপে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের অনেকেই দিশেহারা হতে দেখা যায়। বিশেষ রক্ত এবং রক্তের প্লেটলেট আপাতকালে প্রয়োগ করতে ব্লাড ব্যাংকগুলি তাদের সহানুভূতি দেখিয়েছিল।

সময়ের সাথে, এই আতংক সাম্যে কমে যাওয়া যায়, এবং চিকিৎসকরা যথেষ্ট দক্ষ এবং জনগণও ডেঙ্গু জ্বরের প্রতি সচেতন হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ?

কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর চিকিত্সা করা হয়?

একবার রোগ নির্ণয় নিশ্চিত হয়ে গেলে, সংক্রামিত ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য ডাক্তার ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করবেন।
জ্বরের পর্যায় এবং সমালোচনামূলক পর্যায় থেকে লক্ষণগুলি অনুভব করা এবং রক্তনালীর ফুটো নির্ণয় করা ব্যক্তিদের জন্য, ডাক্তার 24-48 ঘন্টার মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে চিকিত্সা প্রদান করবেনঃ

তরল প্রতিস্থাপন যেসব ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তরল হ্রাস, ক্রমাগত বমি বা ডায়রিয়া, জ্বর হওয়ার পরে নিম্ন রক্তচাপ, ক্ষুধা হ্রাস, বা খাবার বা জল খেতে অস্বীকার করে, ডাক্তার হারিয়ে যাওয়া তরলের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি শিরার মাধ্যমে তরল বা লবণাক্ত দ্রবণ দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
জ্বর কমাতে এবং পেশী ও গাঁটের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেনের মতো শক্তিশালী ব্যথা উপশমকারী ওষুধ দেওয়া হয়।
ও. আর. এস-ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ শরীরে হারিয়ে যাওয়া তরলের ক্ষতিপূরণ এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

রক্ত সঞ্চালনঃ মাসিক, বমি বা অন্ত্রের চলাচলের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গের রক্তক্ষরণ বা রক্তপাতের ক্ষেত্রে, ডাক্তার রক্তক্ষরণ থেকে শক প্রতিরোধ করতে রক্ত সঞ্চালনের কথা বিবেচনা করতে পারেন।

কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা হয়?

ডাক্তার ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করেন মশার সাথে কোনও যোগাযোগ, স্থানীয় অঞ্চলে ভ্রমণের ইতিহাস সহ একটি চিকিৎসা ইতিহাস নিয়ে এবং উপসর্গগুলি মূল্যায়ন করতে এবং সাধারণ সর্দি, জিকা জ্বর, চিকুনগুনিয়া জ্বর বা ম্যালেরিয়ার মতো অন্যান্য অনুরূপ রোগ থেকে ডেঙ্গু জ্বরকে আলাদা করার জন্য প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা করে। ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারদের দ্বারা ব্যবহৃত অতিরিক্ত ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ

টুরনিকেট পরীক্ষাঃ ত্বকের নিচে পেটচিয়া বা রক্তপাতের দাগের জন্য পরীক্ষা বা টুরনিকেট পরীক্ষা ব্যবহার করে। এই পরীক্ষায় ত্বকের নিচে রক্তপাতের দাগের সংখ্যা গণনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপরের বাহুর চারপাশে মোড়ানো একটি টাইট ব্যান্ড বা রক্তচাপের কাফ ব্যবহার করা হয়।
রক্তের উপাদান যেমন প্লেটলেট, লোহিত রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকার পরিবর্তনগুলি পরীক্ষা করার জন্য সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি)। প্লেটলেটের সংখ্যা হ্রাস এবং হেমাটোক্রিট (লোহিত রক্তকণিকার ঘনত্ব) বৃদ্ধি রক্তনালীগুলির ফুটো নির্দেশ করতে পারে, যা ডেঙ্গু জ্বরের একটি লক্ষণ।
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য নির্দিষ্ট ইমিউনোলজিকাল পরীক্ষা, যেমন ডেঙ্গু এনএস1 অ্যান্টিজেন, ডেঙ্গু আইজিএম, এবং ডেঙ্গু আইজিজি, ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় শরীর দ্বারা উত্পাদিত অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে।

আরও পড়ুনঃ

ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনগত উপাদান সনাক্ত করতে আণবিক জিনগত পরীক্ষা, যেমন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর)। এই পরীক্ষাটি সাধারণত লক্ষণগুলির প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি নিশ্চিত করতে এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান কারণ ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেনের যে কোনও একটি সনাক্ত করতে করা হয়।

ডেঙ্গু জ্বরে লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত সাধারণ  প্রশ্ন এবং উত্তর

1. প্রশ্ন: ডেঙ্গু কি?
উত্তর: ডেঙ্গু একটি ভাইরাসের সংক্রমণে হওয়া একটি জনপ্রিয় রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রধান রূপ আছে, এবং প্রতিটি রূপের লক্ষণ এবং গতি বিভিন্ন হতে পারে।

2. প্রশ্ন: ডেঙ্গু সংক্রমণ কীভাবে হয়?
উত্তর: ডেঙ্গু মশা সাধারণভাবে রাতে আক্রমণ করে এবং মৌসুমের আগমনে এই রোগের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়। এই মশা মানুষের রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় এবং এই ভাইরাস একজন সুস্থ ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির দ্বারা সংক্রমণ হতে পারে।

3. প্রশ্ন: ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ কী?
উত্তর: ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হলো মাত্র ৩-৪ দিনের মধ্যে জ্বর, যা অত্যধিক আবহে উঠতে পারে। জ্বরের সাথে শরীরে ব্যাপক যা যা দেখা যেতে পারে সেগুলি হলো: উচ্চ রক্তচাপ, জ্বর, মাংশপেশী ব্যাথা, চোখের দুর্বলতা।

4. প্রশ্ন: ডেঙ্গু প্রতিকার কী?
উত্তর: ডেঙ্গু প্রতিকারের একটি প্রধান উপায় হলো ডেঙ্গু মশার সংখ্যা কমাতে বুকেট ব্যবহার করা। মশা সংক্রমণের খোলনায় সহায়ক। এছাড়াও, প্রাথমিক চিকিত্সা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু সংক্রমণ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

5. প্রশ্ন: ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়? 
উত্তর: ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় হলো নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। বুকেট ব্যবহার এবং মশা সংক্রমণের উপর নির্ভর করা সহযোগিতা করতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ 

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url